কলকাতার চার মহিলা শেষ পর্যন্ত পুরুষতান্ত্রিকতার দুর্গ ভেঙে আসন্ন দুর্গাপূজায় ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছেন। ৬৬ পল্লীর দুর্গোৎসবে পৌরোহিত্য করবেন মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক, রুমা রায়, সেমন্তী ব্যানার্জী এবং পৌলমী চক্রবর্তী - দুর্গাপুজোর ইতিহাসে প্রথমবার !
একটি চলচ্চিত্রের সুবাদে নন্দিনী দেবী আজ সুপরিচিত। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রীটির অধ্যাপিকা ছিলেন গৌরী ধর্মপাল। গৌরীদেবী বেদে উল্লিখিত বিবাহের নিয়মাবলি একসূত্রে গেঁথে এবং তার সঙ্গে এ যুগের উপযোগী নানা বিষয় যোগ করে একটি বিবাহপদ্ধতি তৈরি করেছিলেন, যার নাম "পুরো নতুন বৈদিক বিবাহ"। ছাত্রীবস্থা শেষ করে যখন নন্দিনীদেবী অধ্যাপনা শুরু করেছেন - সেই সময়ে অধ্যাপিকা গৌরী ধর্মপালের সঙ্গে তার ফের যোগাযোগ হয় । তিনি নন্দিনী এবং তার আরেক সহপাঠিনী রুমা দেবীকে প্রস্তাব দেন বিবাহের পুরোহিত হওয়ার। গৌরীদেবীর দেখানো পথ ধরেই তারা পৌরোহিত্য করেন। সেই শুরু। আর পিছনে তাকাতে হয়নি।
আজ নন্দিনী ভৌমিক, রুমা রায়দের দলও দুই থেকে বেড়ে হয়েছে চার। "শুভমস্তু" নামে সেই দলে যোগ দিয়েছেন দুই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, সেমন্তী ব্যানার্জী ও পৌলমী চক্রবর্তী। হ্যাঁ, এদের পৌরহিত্যের যাবতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন রবীন্দ্রনাথ। বিয়ের আসরেও বৈদিক মন্ত্রের সঙ্গে গীত হন রবীন্দ্রনাথ। দুর্গাপুজোর মন্ত্রের সঙ্গেও থাকবেন রবীন্দ্রনাথ।
আহা ! এই অনুষ্ঠানটি যদি সামনে থেকে দেখতে পেতাম! সেমন্তী- পৌলমী দেবীরা পূজামন্ত্রের সঙ্গে কোন রবীন্দ্রসংগীত গুলো গাইবেন সেটা যদি কোনো ভাবে জানা যেত ! এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী "ব্রাহ্ম" রবীন্দ্রনাথ কি মূর্তি পুজোর সঙ্গে বেমানান নন ? এই সাকার- নিরাকার প্রসঙ্গে ১৯০৩ সালে বোলপুর থেকে কাদম্বিনী দেবীকে লেখা একটা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ নিজেই লিখেছিলেন :
"সাকার নিরাকার একটা কথার কথা মাত্র। ঈশ্বর সাকার এবং নিরাকার দুই-ই। শুধু ঈশ্বর কেন আমরা প্রত্যেকেই সাকারও বটে নিরাকারও বটে। আমি এ সকল মতামত লইয়া বাদ-বিবাদ করিতে চাই না। তাহাকে রূপে এবং ভাবে, আকারে এবং নিরাকারে, কর্মে এবং প্রেমে সকল রকমেই ভজনা করিতে হইবে। আকার তো আমাদের রচনা নহে, আকার তো তাঁহার-ই।"
তাই বোধ হয় তিনি লিখতে পেরেছিলেন :
"হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে, আছে, আছে
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই ..."
অনেক অভিনন্দন এই চার বঙ্গললনা কে। মহিলাদের শারোদৎসবে পৌরোহিত্যের এই প্রথাটিও ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হোক। সেই সঙ্গে মহামতি গোখেলের বাণীটিও সত্যি হোক "What Bengal thinks today, India thinks tomorrow" !
শুভমস্তু !
---- © আশাভরী সেন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন